জগন্নাথ দীঘি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি ঐতিহাসিক দীঘি। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এবং এটি উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এই দীঘিটি প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে খনন করা হয়েছে এবং এর নামকরণ করা হয়েছে তৎকালীন হিন্দু জমিদার জগন্নাথের নামে। এছাড়াও, এটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর এই দীঘির পাড়ে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন জংয়ের ঘাঁটির পতন ঘটে এবং এটি কুমিল্লার প্রথম মুক্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয়।
এ ঘাঁটির পতনের মাধ্যমে এ ইউনিয়নের উত্তর-দক্ষিণে ১০ কিলোমিটার শত্রুমুক্ত হয়। পরদিন ২৮ নভেম্বর সকালে সকল মুক্তিযোদ্ধার সহযোগীতায় দীঘির পাড়ে মেজর জংয়ের ঘাঁটিতে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলিত হয়। এই ঘটনার ফলে জগন্নাথ দীঘি কুমিল্লার তথা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রথম মুক্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয় এবং লাল সবুজের প্রথম পতাকা পাকবাহিনীকে পরাজিত করে সর্বপ্রথম জগন্নাথ দীঘির পাড়েই উত্তোলন হয়। এছাড়াও, বিশিষ্ট লেখক জহির রায়হান তার ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে জগন্নাথ দীঘির কথা বর্ণনা করেছেন এবং এর নাম পরীর দীঘি বলে দাবি করেন।
জগন্নাথ দীঘির পাড়ে এবং আশেপাশে বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। এখানে একটি সরকার ঘোষিত আদর্শগ্রাম (গুচ্ছগ্রাম) অবস্থিত, যা সামাজিক উন্নয়নের একটি উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও, এই দীঘির পাড়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।
এই এলাকায় আরো কিছু ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। এই দীঘির পূর্বপাড়ে ভারতের ত্রিপুরা মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প ছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। এছাড়াও, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত এই ইউনিয়নের উত্তরে চিওড়া ইউনিয়ন, পশ্চিমে নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়ন, দক্ষিণে গুণবতী ইউনিয়ন ও আলকরা ইউনিয়ন এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত। এই সব স্থান ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত।
এই এলাকায় পর্যটকরা ঐতিহাসিক স্থানগুলি পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। জগন্নাথ দীঘির পাড়ের এই সব স্থান বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাক্ষী বহন করে।